- readaim.com
- 0
উত্তর::ভূমিকা: অর্থনীতির জগতে, বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে বিক্রেতা ও ক্রেতা তাদের পণ্য ও সেবা আদান-প্রদান করে। বিভিন্ন ধরনের বাজারের মধ্যে একটি বিশেষ ধারণা হলো পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজার। এটি এমন একটি বাজার ব্যবস্থা যেখানে অসংখ্য ক্রেতা এবং বিক্রেতা থাকে, এবং তাদের কেউই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সহজভাবে বলতে গেলে, এই বাজারে সবাই সমান সুযোগ পায় এবং কোনো একক বিক্রেতা বা ক্রেতার হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে না। এই বাজার তত্ত্বীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তব জীবনের বিভিন্ন বাজারকে বোঝার জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করে।
শাব্দিক অর্থ অনুযায়ী, পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজার বলতে এমন একটি বাজারকে বোঝায় যেখানে প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণ এবং নিখুঁত। এখানে কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা বা অসমতা থাকে না, যার ফলে দাম নির্ধারণে কোনো বিক্রেতা বা ক্রেতার প্রভাব থাকে না।
এর পরিচয়ের ক্ষেত্রে বলা যায়, পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজার হলো অর্থনীতির এমন একটি অবস্থা যেখানে অসংখ্য ছোট ছোট বিক্রেতা সমজাতীয় বা অভিন্ন পণ্য বিক্রি করে। এই বাজারে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই বাজারের তথ্য সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকে, এবং যেকোনো বিক্রেতা বা ক্রেতা কোনো বাধা ছাড়াই বাজারে প্রবেশ বা বাজার থেকে বের হতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিশ্চিত করে যে বাজারের দাম কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাধীন নয়, বরং চাহিদা ও যোগানের স্বাভাবিক মিথস্ক্রিয়া দ্বারা নির্ধারিত হয়।
১।অধ্যাপক ই. এইচ. চেম্বারলিন (Prof. E.H. Chamberlin): তিনি বলেন, “পূর্ণ প্রতিযোগিতা হলো এমন এক বাজার ব্যবস্থা, যেখানে অসংখ্য বিক্রেতা একই ধরনের পণ্য বিক্রি করে এবং তাদের মধ্যে প্রবেশ ও প্রস্থানের কোনো বাধা নেই।” (Perfect competition is a market situation where there are a large number of sellers of a homogeneous product, with no restrictions on entry and exit.)
২।অধ্যাপক জে. আর. হিক্স (Prof. J.R. Hicks): তার মতে, “পূর্ণ প্রতিযোগিতা হলো এমন এক অবস্থা, যেখানে কোনো ফার্ম তার নিজস্ব দাম নির্ধারণ করতে পারে না, বরং সে বাজারের বিদ্যমান দামকে মেনে চলে।” (Perfect competition is a state where no firm can influence the price on its own, but instead, it takes the prevailing market price as given.)
৩।অধ্যাপক স্যামুয়েলসন (Prof. Samuelson): তিনি পূর্ণ প্রতিযোগিতাকে এমন একটি বাজার হিসেবে বর্ণনা করেছেন যেখানে “প্রতিযোগিতার শক্তিগুলো এতই শক্তিশালী যে কোনো একক বিক্রেতা বা ক্রেতা পণ্যের দামকে প্রভাবিত করতে পারে না।” (Perfect competition is a market where the forces of competition are so powerful that no single seller or buyer can influence the price of a commodity.)
৪।অধ্যাপক এ. এল. হ্যামিল্টন (Prof. A.L. Hamilton): তিনি বলেন, “পূর্ণ প্রতিযোগিতা বলতে সেই বাজারকে বোঝানো হয় যেখানে অসংখ্য ছোট ছোট বিক্রেতা একই পণ্য বিক্রি করে এবং প্রতিটি বিক্রেতার পণ্য চাহিদার প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক হয়।” (Perfect competition refers to a market where there are numerous small sellers of a homogeneous product, and the demand for each seller’s product is perfectly elastic.)
৫।অধ্যাপক কোহেন ও সিডনিসন (Prof. Cohen and Sidnison): তাদের মতে, “পূর্ণ প্রতিযোগিতা হলো সেই বাজার, যেখানে বিক্রেতাদের সংখ্যা এতো বেশি যে তাদের কোনো একক প্রচেষ্টাই পণ্যের মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারে না।” (Perfect competition is a market where there are so many sellers that no single attempt of theirs can influence the price of the commodity.)
৬।বেনহাম (Benham): তার মতে, “পূর্ণ প্রতিযোগিতা বলতে সেই বাজারকে বোঝানো হয় যেখানে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকে এবং প্রতিটি ফার্ম বা ক্রেতার দামের উপর প্রভাব প্রায় শূন্য।” (Perfect competition is a market where there are so many buyers and sellers that the influence of any single firm or buyer on the price is negligible.)
৭।অধ্যাপক এডওয়ার্ড চেম্বারলিন (Prof. Edward Chamberlin): তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ “The Theory of Monopolistic Competition” এ বলেন, “পূর্ণ প্রতিযোগিতা এমন একটি বাজার, যেখানে বিক্রেতারা এমন সমজাতীয় পণ্য বিক্রি করে যা এক ফার্মের পণ্য অন্য ফার্মের পণ্যের সাথে সম্পূর্ণরূপে বিনিময়যোগ্য।” (Perfect competition is a market where sellers sell a homogeneous product that is perfectly interchangeable with the products of other firms.)
উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি, পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজার হলো এমন এক তাত্ত্বিক বাজার ব্যবস্থা যেখানে অসংখ্য ক্ষুদ্র বিক্রেতা ও ক্রেতা একটি সমজাতীয় পণ্য নিয়ে লেনদেন করে। এই বাজারে প্রবেশ বা প্রস্থানের কোনো বাধা থাকে না এবং পণ্যের দাম চাহিদা ও যোগানের দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়, যেখানে কোনো একক বিক্রেতা বা ক্রেতা দামের উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।
পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১।অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা: পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজারের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো এখানে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা এত বেশি থাকে যে এককভাবে কেউই বাজারের মোট চাহিদা বা সরবরাহের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না। যদি একজন বিক্রেতা তার পণ্যের দাম বাড়ায়, তবে ক্রেতারা সহজেই অন্য বিক্রেতার কাছে চলে যাবে, কারণ সব পণ্যই অভিন্ন। একইভাবে, যদি একজন ক্রেতা পণ্য কেনা বন্ধ করে দেয়, তা মোট চাহিদাকে প্রভাবিত করে না।
২।একই ধরনের পণ্য: এই বাজারে সকল বিক্রেতা হুবহু একই ধরনের বা সমজাতীয় পণ্য বিক্রি করে। এর ফলে ক্রেতারা একজন বিক্রেতার পণ্যকে অন্যজনের পণ্যের থেকে গুণগত মান বা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আলাদা করে দেখতে পারে না। ক্রেতাদের কাছে পণ্যটি ব্র্যান্ড বা মান যাই হোক না কেন, সব এক। এই কারণে ক্রেতারা কেবল দামের উপর ভিত্তি করে তাদের ক্রয় সিদ্ধান্ত নেয়, কারণ অন্য কোনো পার্থক্য বিদ্যমান থাকে না।
৩।পূর্ণ তথ্যের সহজলভ্যতা: পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছেই বাজারের সমস্ত তথ্য সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধ থাকে। ক্রেতারা বাজারের বর্তমান দাম এবং পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে সব তথ্য জানে। একইভাবে, বিক্রেতারাও বাজারের চাহিদা, ব্যয় কাঠামো এবং তাদের প্রতিযোগীদের দাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখে। এই তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে যে বাজারে কোনো পক্ষই অন্য পক্ষের তুলনায় অতিরিক্ত সুবিধা পায় না।
৪।যোগাযোগের স্বাধীনতা: এই বাজারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, যে কোনো ফার্ম অবাধে বাজারে প্রবেশ করতে বা বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। নতুন ফার্ম বাজারে প্রবেশ করতে চাইলে কোনো আইনগত বা আর্থিক বাধা থাকে না। একইভাবে, যদি কোনো ফার্ম লোকসানে থাকে, তবে তা কোনো বাধা ছাড়াই বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। এই স্বাধীনতা বাজারের দীর্ঘমেয়াদি ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৫।দাম গ্রহণকারী: পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রত্যেক ফার্মকে দাম গ্রহণকারী বলা হয়। এর অর্থ হলো, তারা বাজারের প্রচলিত দামকে মেনে নিতে বাধ্য। যেহেতু কোনো ফার্ম এককভাবে বাজারের মোট সরবরাহের একটি ক্ষুদ্র অংশ সরবরাহ করে, তারা তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বা কমাতে পারে না। যদি কোনো ফার্ম দাম বাড়ায়, তবে তার সমস্ত ক্রেতা অন্য বিক্রেতার কাছে চলে যায়। আবার, দাম কমালে তা কেবল তাদের মুনাফা কমিয়ে দেয়, কারণ তারা ইতিমধ্যেই বাজার মূল্যে বিক্রি করতে পারত।
৬।শূন্য মুনাফা: দীর্ঘমেয়াদে পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজারে ফার্মগুলো শুধুমাত্র স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে, অর্থাৎ তাদের অর্থনৈতিক মুনাফা শূন্য থাকে। যদি বাজারে কোনো ফার্ম অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে, তবে নতুন ফার্মগুলো বাজারে প্রবেশ করতে আকৃষ্ট হয়। এর ফলে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং দাম কমে যায়, যতক্ষণ না অতিরিক্ত মুনাফা অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার, যদি কোনো ফার্ম লোকসানে থাকে, তাহলে তারা বাজার থেকে বেরিয়ে যায়।
৭।বিক্রয় ব্যয় নেই: যেহেতু এই বাজারে সমস্ত পণ্যই অভিন্ন বা সমজাতীয়, তাই ফার্মগুলোর মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা থাকে না যা পণ্যের প্রচার বা বিজ্ঞাপনকে উৎসাহিত করে। বিক্রেতাদের বিজ্ঞাপন, প্রচার, বা অন্যান্য বিক্রয় কৌশল অবলম্বন করার প্রয়োজন পড়ে না কারণ ক্রেতারা ইতিমধ্যেই জানে যে সমস্ত পণ্যই একই রকম এবং তাদের কাছে সব তথ্য সহজলভ্য। এর ফলে বিক্রয় ব্যয় প্রায় শূন্য থাকে।
৮।পূর্ণ গতিশীলতা: এই বাজারে উৎপাদনের সমস্ত উপকরণ, যেমন শ্রম এবং মূলধন, পূর্ণ গতিশীল। এর অর্থ হলো, প্রয়োজন অনুযায়ী উপকরণগুলো এক শিল্প থেকে অন্য শিল্পে সহজেই স্থানান্তরিত হতে পারে। কোনো একটি শিল্পে যদি মুনাফা বৃদ্ধি পায়, তবে সেখানে নতুন উপকরণ দ্রুত প্রবেশ করে। আবার, যদি কোনো শিল্পে লোকসান হয়, তবে সেখান থেকে উপকরণ সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে।
৯।সরকারের হস্তক্ষেপের অভাব: পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজার তাত্ত্বিকভাবে এমন একটি অবস্থা যেখানে সরকার বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে না। দাম, সরবরাহ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র বাজার শক্তি, অর্থাৎ চাহিদা এবং সরবরাহের দ্বারা নির্ধারিত হয়। এটি একটি নিখুঁত বাজারের মডেল, যা বাস্তবে খুব কমই দেখা যায়, তবে অর্থনৈতিক তত্ত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১০।সর্বোচ্চ দক্ষতা: এই ধরনের বাজার উৎপাদন এবং বণ্টনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করে। ফার্মগুলো সর্বনিম্ন ব্যয়ে উৎপাদন করে কারণ তাদের টিকে থাকতে হলে তা করতে হয়। এটি উৎপাদনশীল দক্ষতাকে উৎসাহিত করে। অন্যদিকে, যেহেতু দাম প্রান্তিক ব্যয়ের সমান হয়, সম্পদগুলো এমনভাবে বন্টিত হয় যাতে সমাজের মোট কল্যাণ সর্বাধিক হয়।
১১।উপযোগীতা বৃদ্ধি: পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে, কারণ প্রতিযোগিতার কারণে পণ্যের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে। বিক্রেতাদের মধ্যে দামের প্রতিযোগিতা থাকায় ক্রেতারা কম মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য পায়। এর ফলে ক্রেতাদের উপযোগিতা সর্বোচ্চ হয় এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের কল্যাণ বৃদ্ধি পায়।
১২।স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ: এই বাজারে দাম নির্ধারণের জন্য কোনো একক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দায়ী নয়। দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাহিদা এবং সরবরাহের পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। যখন চাহিদা বা সরবরাহ পরিবর্তিত হয়, তখন ভারসাম্য দামও পরিবর্তিত হয়। এটি বাজারের একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা কোনো বাহ্যিক শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।
১৩।বক্ররেখা: পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক ফার্মের চাহিদা রেখাটি পূর্ণ স্থিতিস্থাপক হয়। এটি একটি আনুভূমিক রেখা, যা বোঝায় যে একটি ফার্ম তার পণ্যের দাম যদি সামান্যও বাড়ায়, তবে তার সমস্ত ক্রেতা অন্য বিক্রেতার কাছে চলে যাবে। এর কারণ হলো, ক্রেতারা বাজারে অনেক বিকল্প খুঁজে পায় এবং সব পণ্যই অভিন্ন।
১৪।যোগানের দিক: যেহেতু এই বাজারে অসংখ্য ফার্ম বিদ্যমান থাকে, প্রতিটি ফার্মের যোগান রেখার সমষ্টি হলো বাজারের সামগ্রিক যোগান রেখা। কোনো একক ফার্মের যোগান বৃদ্ধি বা হ্রাস বাজারের মোট যোগানের উপর তেমন প্রভাব ফেলে না। তবে যখন বহু ফার্ম একই সাথে যোগান পরিবর্তন করে, তখন বাজারের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়।
১৫।উৎপাদনশীলতার চাপ: পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য ফার্মগুলোকে তাদের উৎপাদনশীলতা ক্রমাগত উন্নত করতে হয়। যেহেতু তারা দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তাই তাদের মুনাফা বাড়ানোর একমাত্র উপায় হলো ব্যয় হ্রাস করা। এর ফলে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উৎপাদন পদ্ধতির উদ্ভাবন ঘটে, যা সমাজের জন্য উপকারী।
১৬।কাজের স্বাধীনতা: বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছামতো উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে পারে। তারা বাজারের চাহিদা ও দামের উপর ভিত্তি করে তাদের উৎপাদন পরিকল্পনা করে। বাজারে প্রবেশ ও প্রস্থানের স্বাধীনতা থাকায় তারা কোনো রকম বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই স্বাধীনতা তাদের কর্মক্ষমতাকে আরও উন্নত করে।
১৭।মুনাফা কেন্দ্রিকতা: পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজারের ফার্মগুলোর প্রধান লক্ষ্য থাকে মুনাফা সর্বোচ্চ করা। যদিও দীর্ঘমেয়াদে তারা অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জন করতে পারে না, স্বল্পমেয়াদে তারা মুনাফা বাড়ানোর জন্য উৎপাদনের পরিমাণ সামঞ্জস্য করে। তবে এই মুনাফা কেন্দ্রিকতা তাদেরকে দাম কমাতে বা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে উৎসাহিত করে, যা ক্রেতাদের জন্য উপকারী।
উপসংহার: পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজার হলো একটি আদর্শ মডেল যা অর্থনীতিতে দক্ষতা ও সম্পদের সর্বোত্তম বণ্টন ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি বাস্তব জীবনে খুব কমই দেখা গেলেও, এর বৈশিষ্ট্যগুলো বাজার অর্থনীতির মৌলিক নীতিগুলো বুঝতে সাহায্য করে। এই মডেল প্রমাণ করে যে, যখন বাজার শক্তি অবাধে কাজ করতে পারে, তখন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই তা সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করে।
পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজার হলো এমন এক বাজার যেখানে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা সমজাতীয় পণ্য নিয়ে লেনদেন করে এবং কোনো একক ক্রেতা বা বিক্রেতা দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
১। অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা ২। একই ধরনের পণ্য ৩। পূর্ণ তথ্যের সহজলভ্যতা ৪। যোগাযোগের স্বাধীনতা ৫। দাম গ্রহণকারী ৬। শূন্য মুনাফা ৭। বিক্রয় ব্যয় নেই ৮। পূর্ণ গতিশীলতা ৯। সরকারের হস্তক্ষেপের অভাব ১০। সর্বোচ্চ দক্ষতা ১১। উপযোগিতা বৃদ্ধি ১২। স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ ১৩। বক্ররেখা ১৪। যোগানের দিক ১৫। উৎপাদনশীলতার চাপ ১৬। কাজের স্বাধীনতা ১৭। মুনাফা কেন্দ্রিকতা।
পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক বাজারের ধারণাটি ১৮শ শতাব্দীর শেষ দিকে অ্যাডাম স্মিথের “অদৃশ্য হাত” তত্ত্বের মাধ্যমে বিকশিত হয়। তবে, এই মডেলের আনুষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপন করেন ১৯শ শতাব্দীর অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শাল তার “প্রিন্সিপালস অফ ইকোনমিক্স” গ্রন্থে। পরবর্তীতে, ২০০৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্বের মাত্র ১৫% বাজার সম্পূর্ণ বা প্রায় সম্পূর্ণভাবে পূর্ণপ্রতিযোগিতামূলক মডেলের কাছাকাছি ছিল, যার মধ্যে কৃষি পণ্য, যেমন চাল এবং গম, উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো (যেমন eBay) এমন পরিবেশ তৈরি করছে যেখানে অসংখ্য ক্রেতা-বিক্রেতা উপস্থিত থাকে, যা পূর্ণপ্রতিযোগিতার কিছু বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।

