- readaim.com
- 0

উত্তর::সূচনা:- বর্ণপ্রথা হলো হিন্দু সমাজের একটি প্রাচীন সামাজিক কাঠামো, যা মানুষকে জন্মগতভাবে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে। এটি সমাজে অসমতা ও বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। বর্ণপ্রথার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনেরও অংশ। এই নিবন্ধে বর্ণপ্রথার চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে আলোচনা করা হবে।
১. জন্মগত বিভাজন :- বর্ণপ্রথার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি জন্মের উপর ভিত্তি করে মানুষকে শ্রেণীবদ্ধ করে। একজন ব্যক্তির বর্ণ নির্ধারিত হয় তার পিতামাতার বর্ণ অনুযায়ী। যেমন, ব্রাহ্মণের সন্তান ব্রাহ্মণ এবং শূদ্রের সন্তান শূদ্র হিসেবেই পরিচিত হয়। এই ব্যবস্থায় ব্যক্তির যোগ্যতা বা কর্মের চেয়ে জন্মই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। এটি সমাজে স্থায়ী বিভেদ তৈরি করে, যা পরিবর্তন করা কঠিন।
২. পেশার উপর নিয়ন্ত্রণ:- প্রতিটি বর্ণের জন্য আলাদা পেশা নির্ধারিত থাকে। ব্রাহ্মণেরা পূজা-অর্চনা ও জ্ঞানচর্চা করেন, ক্ষত্রিয়েরা যুদ্ধ ও শাসনকার্য পরিচালনা করেন, বৈশ্যেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন এবং শূদ্রেরা সেবামূলক কাজ করেন। এই বাধ্যবাধকতা মানুষকে তার জন্মগত পেশায় আবদ্ধ রাখে, যা সামাজিক গতিশীলতাকে সীমিত করে।
৩. অন্তর্বিবাহের প্রচলন :- বর্ণপ্রথা একই বর্ণের মধ্যে বিবাহকে উৎসাহিত করে এবং বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ বা নিন্দনীয় হিসেবে দেখা হয়। এই প্রথা সমাজকে আরও বেশি বিভক্ত করে এবং বর্ণ之间的 সম্পর্ককে জটিল করে তোলে। এমনকি আধুনিক যুগেও অনেক স্থানে এই রীতি প্রচলিত রয়েছে।
৪. সামাজিক বৈষম্য :- বর্ণপ্রথার সবচেয়ে নিষ্ঠুর দিক হলো অস্পৃশ্যতা, যেখানে নিম্নবর্ণের মানুষদের (বিশেষত দলিত) সমাজের মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। তাদের মন্দিরে প্রবেশ, উচ্চবর্ণের জলাশয় ব্যবহার বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ। এই বৈষম্য আজও অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান, যদিও আইনগতভাবে এটি নিষিদ্ধ।
উপসংহার:- বর্ণপ্রথা একটি জটিল সামাজিক ব্যবস্থা, যা শতাব্দী ধরে ভারতীয় সমাজকে প্রভাবিত করেছে। যদিও আধুনিক যুগে এর প্রভাব কমছে, তবুও অনেক ক্ষেত্রে এটি এখনও বিদ্যমান। বর্ণপ্রথার বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝলে আমরা সামাজিক অসাম্য দূর করার পথ খুঁজে পেতে পারি। শিক্ষা ও সচেতনতা এই প্রথা ভাঙার প্রধান হাতিয়ার।
এক নজরে বর্ণপ্রথার চারটি বৈশিষ্ট্য:
- ✔ জন্মগত বিভাজন
- ✔ পেশার উপর নিয়ন্ত্রণ
- ✔ অন্তর্বিবাহের প্রচলন
- ✔ অস্পৃশ্যতা ও বৈষম্য
বর্ণপ্রথা প্রায় ৩০০০ বছর পুরনো এবং বৈদিক যুগ থেকে এর উৎপত্তি। ১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধানে বর্ণভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ২০ কোটি দলিত মানুষ রয়েছেন। ড. বি. আর. আম্বেডকর বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করে দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে অনেক সংগঠন বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে ‘পুরুষসূক্ত’-এ প্রথম চারটি বর্ণের (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) উল্লেখ পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থান বর্ণপ্রথার কঠোরতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে বর্ণভিত্তিক আদমশুমারি এবং ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা বর্ণপ্রথাকে আরও দৃঢ় করে তুলেছিল। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, তফসিলি জাতি ও উপজাতিরা ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণের মানুষরা এখনও পিছিয়ে রয়েছে। নীতি নির্ধারক এবং সমাজকর্মীরা বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তবে এই দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়াটির জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।