- readaim.com
- 0

উত্তর::ভূমিকা: বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ এবং এর জনসংখ্যার সিংহভাগই গ্রামে বসবাস করে। গ্রামীণ জীবনের উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গ্রামীণ সমাজসেবার মূল লক্ষ্য হলো প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা।
গ্রামীণ সমাজসেবা বলতে বোঝায় সেই সমস্ত সংগঠিত কার্যক্রম যা গ্রামীণ সমাজের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরিচালিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। এই সেবাগুলো সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক।
শাব্দিক অর্থ: ‘গ্রামীণ’ শব্দটি গ্রাম বা গ্রামের সাথে সম্পর্কিত এবং ‘সমাজসেবা’ বলতে সমাজের কল্যাণে পরিচালিত কাজ বোঝায়। সুতরাং, গ্রামীণ সমাজসেবা এর শাব্দিক অর্থ হলো ‘গ্রামের মানুষের কল্যাণের জন্য পরিচালিত সেবা’।
বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষক সমাজের কল্যাণ ও উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে যে সংজ্ঞাগুলো দিয়েছেন, তা গ্রামীণ সমাজসেবার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নিচে তাদের কিছু সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো:
১। সমাজবিজ্ঞানী ওডুম (Odum) ও মুর (Moore) – তাদের মতে, সমাজসেবা হলো একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যা সমাজের বিশেষ প্রয়োজনে নির্দিষ্ট কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে (Social service is a scientific method that carries out certain activities for the specific needs of society)।
২। অধ্যাপক সি.এ. মর্গান (C.A. Morgan) – তিনি সমাজসেবাকে এমন একটি প্রক্রিয়া হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, যা সমাজের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও মানবিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে (He defines social service as a process that improves the quality of life of society members through mutual cooperation and development of human relationships)।
৩। ডব্লিউ.এ. ফ্রিডল্যান্ডার (W.A. Friedlander) – তিনি বলেন, সমাজসেবা হলো একটি পেশাদার সেবা, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সমস্যা সমাধানে সহায়ক (He says, social service is a professional service that helps solve the problems of people from different levels of society)।
৪। অধ্যাপক ই.এস. বোগার্ডাস (E.S. Bogardus) – তার মতে, সমাজসেবা হলো সমাজের দুর্বল, পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উন্নয়নের জন্য পরিচালিত সকল প্রকার কার্যক্রম (According to him, social service is all kinds of activities carried out for the development of weak, backward, and disadvantaged people of society)।
৫। স্যার উইলিয়াম বেভারিজ (Sir William Beveridge) – তিনি সমাজসেবাকে সমাজের পাঁচটি বৃহৎ শত্রু, যেমন: দারিদ্র্য, রোগ, নিরক্ষরতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বেকারত্ব থেকে মানুষকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন (He defines social service as an effort to free people from the five great enemies of society: poverty, disease, illiteracy, unhealthy environment, and unemployment)।
৬। সমাজবিজ্ঞানী হ্যারিস (Harris) – তিনি বলেন, সমাজসেবা হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি সদস্য তার সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে পারে এবং সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে (He says, social service is the process by which every member of society can develop their full potential and contribute to the development of society)।
উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে আমরা গ্রামীণ সমাজসেবাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি যে, এটি হলো একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়া, যা গ্রামীণ সমাজের পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক, ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মূল লক্ষ্য হলো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য, নিরক্ষরতা ও দারিদ্র্য দূর করে একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করা।
১। দারিদ্র্য বিমোচন ও স্বাবলম্বীকরণ কর্মসূচি: গ্রামীণ সমাজসেবার একটি অন্যতম প্রধান দিক হলো দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলা। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যেমন ক্ষুদ্রঋণ প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ। এই কর্মসূচিগুলো গ্রামীণ পরিবারের সদস্যদের নিজেদের উদ্যোগে ছোট ব্যবসা শুরু করতে বা কৃষিভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে। এর ফলে তারা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করে এবং পরনির্ভরশীলতা হ্রাস পায়। অনেক ক্ষেত্রেই, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়, যা তাদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২। বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কর্মসূচি: বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বয়স্ক এবং বিধবাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। সরকার এই কর্মসূচির মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক বয়স্ক এবং বিধবা নারীকে মাসিক ভাতা প্রদান করে। এই ভাতা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করে এবং অর্থনৈতিক চাপ কিছুটা হলেও কমায়। এই আর্থিক সহায়তা তাদের জীবনকে আরো স্থিতিশীল করে তোলে এবং সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে। এই ভাতা প্রদানের ফলে অনেক বয়স্ক মানুষ ও বিধবারা নিজেদেরকে পরিবারের বোঝা মনে করেন না, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ইতিবাচক।
৩। প্রতিবন্ধী ভাতা ও পুনর্বাসন: গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ভাতা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিবন্ধী ভাতা তাদের জীবনধারণের ব্যয় মেটাতে সাহায্য করে, যা তাদের পরিবারের উপর আর্থিক চাপ কমায়। একই সাথে, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, যাতে তারা সমাজে বোঝা না হয়ে বরং একজন কর্মক্ষম সদস্য হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এই ধরনের উদ্যোগগুলো গ্রামীণ সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতেও সাহায্য করে।
৪। শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা: গ্রামীণ সমাজসেবার একটি অপরিহার্য অংশ হলো শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রসবকালীন সেবা এবং শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রচারণার আয়োজন করা হয়। এই উদ্যোগগুলো গ্রামীণ অঞ্চলে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে এবং সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫। গ্রামীণ স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি: গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি একটি মৌলিক বিষয়। গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় নিরাপদ পানীয় জলের উৎস নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণে সহায়তা করা হয়। বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, যেমন নিয়মিত হাত ধোয়া এবং খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ না করার বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়। এর ফলে জলবাহিত রোগ এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিস্তার হ্রাস পায়।
৬। শিক্ষা প্রসারে সহায়তা: গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা সমাজসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণ, বৃত্তি এবং স্কুলগামী করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান করে। এছাড়াও, বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয় যাতে নিরক্ষর মানুষরা সাক্ষরতা অর্জন করতে পারে। এই ধরনের উদ্যোগগুলো গ্রামীণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
৭। কৃষি ও মৎস্য খাতে সহায়তা: বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো কৃষি ও মৎস্য খাত। সমাজসেবার অংশ হিসেবে কৃষকদের উন্নত বীজ, সার এবং কৃষি সরঞ্জাম পেতে সহায়তা করা হয়। এছাড়াও, কৃষি ও মৎস্য চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই সহায়তাগুলো গ্রামীণ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং কৃষকদের আয় বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হয়।
৮। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন: গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রমের একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো নারীর ক্ষমতায়ন। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হয় যাতে তারা নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে পারে। এছাড়া, হস্তশিল্প, সেলাই এবং অন্যান্য কারিগরি কাজে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই উদ্যোগগুলো নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে এবং সমাজে তাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
৯। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম: সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রামীণ সমাজসেবার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মধ্যে রয়েছে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী এবং দুঃস্থ মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও সহায়তা। এই কর্মসূচিগুলো সমাজে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে, যা তাদের আর্থিক সংকটের সময় সহায়তা করে। এই ধরনের সহায়তা তাদের জীবনকে আরো স্থিতিশীল করে তোলে।
১০। দুর্যোগ মোকাবেলা ও ত্রাণ কার্যক্রম: বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ। গ্রামীণ সমাজসেবা দুর্যোগের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী, আশ্রয় এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও, দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হয়।
১১। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন: গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন সমাজসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং স্থানীয় বাজারে পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে। এছাড়াও, উন্নত অবকাঠামো গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
১২। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়ন: গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন অপরিহার্য। গ্রামীণ সমাজসেবার আওতায় কারিগরদের প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা করা হয়। এর ফলে ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলো টিকে থাকে এবং গ্রামীণ মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এই উদ্যোগগুলো স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে।
১৩। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: সমাজসেবা কার্যক্রমের একটি প্রধান লক্ষ্য হলো গ্রামীণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এর মধ্যে রয়েছে বাল্যবিবাহ রোধ, যৌতুক প্রথা বন্ধ, মাদক বিরোধী প্রচারণা এবং পরিবেশ সচেতনতা। এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমগুলো গ্রামীণ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।
১৪। আইন সহায়তা ও বিরোধ নিষ্পত্তি: গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে আইন সহায়তা প্রদান করা হয়। গ্রাম আদালত এবং সালিশের মাধ্যমে স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়, যা তাদের আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা থেকে রক্ষা করে। এটি গ্রামীণ বিচার ব্যবস্থাকে আরো সহজ ও কার্যকর করে তোলে।
১৫। পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: পরিবার পরিকল্পনা গ্রামীণ সমাজসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে ছোট পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় এবং এ সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করা হয়। এই উদ্যোগগুলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এবং একটি সুস্থ ও পরিকল্পিত পরিবার গঠনে সাহায্য করে।
১৬। যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ: গ্রামীণ যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সমাজসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যুবকদের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ, যেমন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কৃষি প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণগুলো তাদের কর্মসংস্থান পেতে বা স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে।
১৭। পরিবেশ সংরক্ষণ ও বনায়ন: পরিবেশ সংরক্ষণ গ্রামীণ সমাজসেবার একটি অপরিহার্য অংশ। গ্রামীণ এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, জলাধার সংরক্ষণ এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। এই উদ্যোগগুলো গ্রামীণ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করে।
১৮। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও বিনোদন: গ্রামীণ সমাজে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয় যাতে মানুষের জীবন আরো আনন্দময় হয়। বিভিন্ন লোকজ উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এই কার্যক্রমগুলো গ্রামীণ মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
১৯। সমবায় ও দলীয় কার্যক্রম: গ্রামীণ সমাজসেবায় সমবায় ও দলীয় কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন সমবায় সমিতির মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষ একত্রিত হয়ে নিজেদের সমস্যা সমাধানে কাজ করে। এর ফলে তারা সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এবং একে অপরের সহায়তায় নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।
উপসংহার: বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম একটি বহুমুখী প্রক্রিয়া যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দারিদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, এবং নারীর ক্ষমতায়ন – প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই কার্যক্রমের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় গ্রামীণ জীবনযাত্রা আরো উন্নত হচ্ছে এবং একটি স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ গ্রামীণ সমাজ গড়ে উঠছে।
- 💸 দারিদ্র্য বিমোচন ও স্বাবলম্বীকরণ কর্মসূচি
- 👵 বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কর্মসূচি
- ♿ প্রতিবন্ধী ভাতা ও পুনর্বাসন
- 👶 শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা
- 💧 গ্রামীণ স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি
- 📚 শিক্ষা প্রসারে সহায়তা
- 🌾 কৃষি ও মৎস্য খাতে সহায়তা
- 👩💼 নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন
- 🛡️ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম
- 🆘 দুর্যোগ মোকাবেলা ও ত্রাণ কার্যক্রম
- 🛣️ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন
- 🧵 ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়ন
- 📢 সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি
- ⚖️ আইন সহায়তা ও বিরোধ নিষ্পত্তি
- 👨👩👧👦 পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
- 🤸♂️ যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ
- 🌳 পরিবেশ সংরক্ষণ ও বনায়ন
- 🎭 সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও বিনোদন
- 🤝 সমবায় ও দলীয় কার্যক্রম।
১৯৬১ সালে ‘সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রামীণ সমাজসেবার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজকল্যাণ কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে ‘গ্রাম সরকার’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন, যা গ্রামীণ উন্নয়নকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের ‘গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি’ এবং ২০০০ সালের ‘বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি’ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে। সর্বশেষ, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জরিপ অনুসারে, গ্রামীণ এলাকায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন মানুষ উপকৃত হয়েছে। এই ঐতিহাসিক ও পরিসংখ্যানগত তথ্যগুলো গ্রামীণ সমাজসেবার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে তুলে ধরে।