- readaim.com
- 0

উত্তর::ভূমিকা:-সমাজবিজ্ঞান হলো মানুষের সমাজ, সম্পর্ক এবং আচরণ সম্পর্কিত একটি শাখা যা মানবিক আচরণ, সমাজের গঠন এবং তার বিবর্তনকে অধ্যয়ন করে। সমাজবিজ্ঞানকে ‘মূল্যবোধ নিরক্ষেপ বিজ্ঞান’ বলা হয়, কারণ এটি শুধুমাত্র সমাজের অবস্থা ও তার গঠন বোঝার জন্য কাজ করে না, বরং মানুষের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, বিশ্বাস এবং সামাজিক কাঠামোকে বিশ্লেষণ করে। সমাজবিজ্ঞানের এই বিশেষত্বের মাধ্যমে একে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়।
নিম্নে সমাজবিজ্ঞানকে ‘মূল্যবোধ নিরক্ষেপ বিজ্ঞান’ বলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আলোচনা করা হলো-
১।🌍 মানুষের আচরণের মূল্যবোধের উপর প্রভাব:- সমাজবিজ্ঞান মানুষের আচরণ এবং তার মধ্যে গড়ে ওঠা মূল্যবোধের বিশ্লেষণ করে। এটি সমাজের ভিত্তি, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং নৈতিক ধারণার ওপর গুরুত্ব দিয়ে মানুষের মনোবিকাশ এবং আচার-আচরণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়।
২।⚖️ নৈতিকতার ওপর গভীর বিশ্লেষণ:- সমাজবিজ্ঞান সমাজের নৈতিক ভিত্তি এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করে। সমাজে প্রচলিত নৈতিকতা ও নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো কিভাবে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে, সমাজবিজ্ঞানী তা বিশ্লেষণ করেন।
৩।🌱 সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অর্ন্তনিহিত সম্পর্ক:- সমাজবিজ্ঞান সমাজের সাংস্কৃতিক মূল্যে এবং ঐতিহ্যগুলো নিয়ে গবেষণা করে। এটি বোঝায় কিভাবে সংস্কৃতি এবং তার মূল্যবোধ সমাজের কাঠামো, চিন্তাভাবনা ও মানুষের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।
৪।👥 সামাজিক সম্পর্ক এবং মূল্যবোধ:- সমাজবিজ্ঞানী গবেষকরা মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্ক এবং তার ভিত্তি হিসেবে মূল্যবোধের প্রভাব নিয়ে কাজ করেন। এসব সম্পর্কের মাধ্যমে সমাজের পরিসর এবং মূল্যবোধের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়।
৫।🛠️ সমাজের প্রতি পরিবর্তনের প্রভাব:- সমাজবিজ্ঞান মূল্যবোধ এবং তার পরিবর্তনশীল প্রকৃতির ওপর বিশ্লেষণ করে। এটি সমাজে নতুন মূল্যবোধের উদ্ভব এবং পুরোনো ধারণাগুলোর পরিবর্তনকে বিশ্লেষণ করে, যা সমাজের কাঠামোকে নতুন করে নির্মাণ করে।
৬।📊 গবেষণায় মূল্যবোধের ভূমিকা:- সমাজবিজ্ঞানী গবেষকরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে মূল্যবোধের বিকাশ এবং তাদের সামাজিক কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। গবেষণার মাধ্যমে সমাজের কাঠামো, সৃজনশীলতা এবং মূল্যবোধের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়।
৭।💡 স্বাধীন চিন্তা এবং সমালোচনা:- সমাজবিজ্ঞান সমাজে প্রভাবিত মূল্যবোধের প্রতি সমালোচনা এবং নতুন ধারণার সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। এটি সমাজের নৈতিক আদর্শের বিরুদ্ধে চিন্তাশীলতা ও স্বাধীন মতামত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে।
৮।🌍 বিশ্বজনীন দৃষ্টিকোণ:- সমাজবিজ্ঞান বিশ্বব্যাপী সমাজের মূল্যবোধের ওপর গবেষণা করে, এবং এটি সমাজের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের মধ্যে একযোগিতা এবং পরিবর্তনের সম্পর্ক বোঝাতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক সমাজের বিকাশের জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।
৯।⚡ ধর্মের ভূমিকা:- ধর্ম ও মূল্যবোধ সমাজবিজ্ঞানী গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান রাখে। সমাজের ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং তার প্রভাব বিভিন্ন সামাজিক কাঠামো এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মধ্যে বিশ্লেষিত হয়, যা সমাজের নৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলে।
প্রশ্নটির উত্তরে একের অধিক অংশ থাকলে এই অংশটি ব্যবহার করুন।
এক নজরে সমাজবিজ্ঞানকে ‘মূল্যবোধ নিরক্ষেপ বিজ্ঞান’ বলার কারণ:-
- 🌍 ১।মানুষের আচরণের মূল্যবোধের উপর প্রভাব
- ⚖️ ২।নৈতিকতার ওপর গভীর বিশ্লেষণ
- 🌱 ৩। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অর্ন্তনিহিত সম্পর্ক
- 👥 ৪।সামাজিক সম্পর্ক এবং মূল্যবোধ
- 🛠️ ৫। সমাজের প্রতি পরিবর্তনের প্রভাব
- 📊 ৬।গবেষণায় মূল্যবোধের ভূমিকা
- 💡 ৭।স্বাধীন চিন্তা এবং সমালোচনা
- 🌍 ৮।বিশ্বজনীন দৃষ্টিকোণ
- ⚡ ৯।ধর্মের ভূমিকা
সমাজবিজ্ঞানকে ‘মূল্যবোধ নিরেক্ষ বিজ্ঞান’ বলা হয় কারণ এটি সমাজ ও মানুষের আচরণকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে এবং তা মূল্যায়ন বা বিচার না করে শুধু পর্যবেক্ষণ করে। পিওর সোসিওলজি বা সমাজবিজ্ঞানের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইউগেনিয়াস ডি’জিরণের নাম উল্লেখ করা যায়, যিনি ১৮৫০ সালে প্রথম সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ম্যাক্স ওয়েবার (১৯১৮) মূল্যবোধ নিরপেক্ষতার কথা বলেন, যেখানে তিনি সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হিসেবে গবেষণায় পক্ষপাতিত্ব না করার কথা উল্লেখ করেন। সমাজবিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় নৈতিকতার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে চান, যেন তা সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারে।