- readaim.com
- 0

উত্তর::সূচনা:- মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা এবং সমাজের নিয়মকানুন মেনে চলা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। এই জটিল সামাজিক জগৎকে বুঝতে পারা, সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা অত্যন্ত জরুরি। সমাজবিজ্ঞান ঠিক এই কাজটিই করে থাকে। এটি কেবল একটি একাডেমিক বিষয় নয়, বরং একটি অপরিহার্য জ্ঞানক্ষেত্র যা আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। আসুন, সমাজবিজ্ঞান পাঠের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১.সমাজের স্বরূপ উপলব্ধি:- সমাজবিজ্ঞান আমাদের সমাজের কাঠামো, সংস্কৃতি, রীতিনীতি এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন পরিবার, শিক্ষা, ধর্ম, অর্থনীতি ও রাজনীতি কীভাবে কাজ করে এবং একে অপরের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত, তা আমরা সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কেন কিছু প্রথা প্রচলিত আছে এবং সময়ের সাথে সাথে সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে।
২.সামাজিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও বিশ্লেষণ:- দারিদ্র্য, বৈষম্য, অপরাধ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, মাদকাসক্তি ইত্যাদি বহুবিধ সামাজিক সমস্যা আমাদের সমাজে বিদ্যমান। সমাজবিজ্ঞান এসব সমস্যার কারণ, প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করে। বিভিন্ন গবেষণা পদ্ধতি ও তত্ত্বের মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানীরা এসব সমস্যার মূলে প্রবেশ করেন এবং কার্যকর নীতি নির্ধারণে সহায়তা করেন। যেমন, জাতিসংঘের ১৯৯৫ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে দারিদ্র্যকে কেবল আয়ের অভাব হিসেবে না দেখে সুযোগের অভাব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যা দারিদ্র্য বিমোচনের ধারণায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
৩.সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা লাভ:- সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের কারণ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। সমাজবিজ্ঞান আমাদের সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন দিক, যেমন শিল্পায়ন, নগরায়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিশ্বায়নের প্রভাব সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে আমরা একটি স্থিতিশীল ও উন্নত সমাজ গঠনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারি। বিশ্ব ব্যাংকের ১৯৯০ সালের ‘দারিদ্র্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুত নগরায়নের ফলে সৃষ্ট সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
৪.সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন:- প্রতিটি সমাজের নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতিনীতি রয়েছে। সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন সংস্কৃতির তুলনামূলক अध्ययनের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা ও ঐক্যের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এর ফলে আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সহনশীলতা ও সহযোগিতা গড়ে ওঠে। যেমন, নৃবিজ্ঞানী মার্গারেট Mead বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সামোয়ান সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন যে কীভাবে সংস্কৃতি মানুষের আচরণ ও ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে।
৫.সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনুধাবন:- পরিবার, শিক্ষা, ধর্ম, অর্থনীতি এবং রাষ্ট্র – এই সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজবিজ্ঞান এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি, বিকাশ এবং কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান দান করে। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে এবং কীভাবে তাদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষাবিদ এমিল Durkheim উনিশ শতকে দেখিয়েছিলেন যে শিক্ষা কেবল জ্ঞান দানই করে না, বরং সামাজিক সংহতি বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬.সামাজিক স্তরবিন্যাস ও বৈষম্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ:- সমাজে বিভিন্ন ধরনের স্তরবিন্যাস দেখা যায়, যেমন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক। এই স্তরবিন্যাসের ফলে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হয়। সমাজবিজ্ঞান এই বৈষম্যের কারণ, প্রকৃতি ও পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করে এবং একটিequitable সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অক্সফ্যামের ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বিশ্বের ৮ জন ধনী ব্যক্তির কাছে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তা বিশ্বের দরিদ্রতম অর্ধেক জনগোষ্ঠীর মোট সম্পদের সমান।
৭.গোষ্ঠী ও সংগঠনের গতিশীলতা অনুধাবন:- সমাজে বিভিন্ন ধরনের গোষ্ঠী ও সংগঠন বিদ্যমান। এই গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলোর নিজস্ব নিয়মকানুন, ক্ষমতা কাঠামো এবং কার্যপদ্ধতি রয়েছে। সমাজবিজ্ঞান এসব গোষ্ঠী ও সংগঠনের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা এবং সমাজে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে আমরা দলবদ্ধভাবে কাজ করার এবং সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হই।
৮.সামাজিক নীতি প্রণয়নে সহায়তা:- সমাজবিজ্ঞান লব্ধ জ্ঞান সামাজিক নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামাজিক সমস্যার গভীর বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে জানার মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানীরা কার্যকর ও জনকল্যাণমুখী নীতি নির্ধারণে সরকারকে সহায়তা করতে পারে। যেমন, বাংলাদেশে ১৯৯০-এর দশকে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের পেছনে মাঠপর্যায়ের সমাজকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
৯.সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ:- সমাজবিজ্ঞান কেবল তথ্য প্রদানই করে না, বরং বিদ্যমান সামাজিক কাঠামো ও প্রথা সম্পর্কে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে আমরা সমাজের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতে এবং একটি উন্নত সমাজ গঠনের জন্য নতুন ধারণা ও পদ্ধতির অনুসন্ধান করতে পারি।
১০.ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সাফল্য লাভ:- সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বিভিন্নভাবে কাজে লাগে। মানুষের আচরণ, সামাজিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগের দক্ষতা সম্পর্কে জ্ঞান থাকার ফলে কর্মক্ষেত্রে অন্যদের সাথে সহযোগিতা করতে এবং কার্যকরভাবে নেতৃত্ব দিতে সুবিধা হয়। বিভিন্ন পেশায়, যেমন সাংবাদিকতা, আইন, প্রশাসন, সমাজসেবা, এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সমাজতাত্ত্বিক জ্ঞান অপরিহার্য।
বিশ্ব এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বেড়েছে। সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন সমাজের রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্ব নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করতে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও ভালোভাবে ভূমিকা রাখতে পারি।
১২.সামাজিক গবেষণা পদ্ধতির জ্ঞান লাভ:- সমাজবিজ্ঞান সামাজিক সমস্যা ও বিষয়াবলী অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন আমাদের নিজেদের জীবনে এবং কর্মক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।
১৩.আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি:- সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আমাদের সম্পর্ক সম্পর্কে আরও সচেতন হই। এর ফলে আমরা নিজেদের বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং আচরণের কারণ বুঝতে পারি এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করতে সক্ষম হই।
১৪.সহানুভূতির বিকাশ:- বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী ও মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে সহানুভূতি ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জন্মায়। এর ফলে আমরা একটিinclusive ও মানবিক সমাজ গঠনে উৎসাহিত হই।
১৫.নাগরিক দায়িত্ব পালন:- একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। সমাজবিজ্ঞান আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে এবং আমাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এর মাধ্যমে আমরা একটি সক্রিয় ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সমাজে অবদান রাখতে পারি।
১৬.প্রযুক্তি ও সমাজের সম্পর্ক অনুধাবন:- বর্তমান যুগে প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সমাজবিজ্ঞান এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে এবং এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সহায়তা করে। যেমন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের ফলে সমাজে নতুন ধরনের সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগের ধরণ তৈরি হয়েছে, যা সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়।
১৭.জনস্বাস্থ্য ও সমাজ:- মানুষের স্বাস্থ্য কেবল জৈবিক বিষয় নয়, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত কারণগুলোর সাথেও সম্পর্কিত। সমাজবিজ্ঞান জনস্বাস্থ্যের সামাজিক নির্ধারকগুলো, যেমন দারিদ্র্য, শিক্ষা, বাসস্থান ও পেশা সম্পর্কে জ্ঞান দান করে এবং স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে সামাজিক অসমতার কারণে স্বাস্থ্য বৈষম্যের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
১৮.পরিবেশ ও সমাজ:- পরিবেশগত সমস্যাগুলো আজ বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ। সমাজবিজ্ঞান পরিবেশের উপর মানুষের কার্যকলাপের প্রভাব এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের সামাজিক পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করে। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমাজতাত্ত্বিক জ্ঞান অপরিহার্য।
১৯।জেন্ডার ও সমাজ:- সমাজে নারী ও পুরুষের ভূমিকা এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাজবিজ্ঞান জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমাজে জেন্ডারের প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। এর মাধ্যমে একটি জেন্ডার-সমতাপূর্ণ সমাজ গঠনে সহায়তা করা সম্ভব।
২০.নগরায়ন ও সমাজ:- বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এখন শহরে বাস করে। নগরায়ন সমাজের কাঠামো, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। সমাজবিজ্ঞান নগরায়নের কারণ, প্রক্রিয়া ও এর সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে এবং নগর नियोजन ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।
২১.বয়স্ক জনসংখ্যা ও সমাজ:- বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বয়স্ক জনসংখ্যার হার বাড়ছে। সমাজবিজ্ঞান বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য related সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করে।
উপসংহার:- পরিশেষে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান পাঠ কেবল একটি জ্ঞানার্জন প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতাও। সমাজের একজন সচেতন সদস্য হিসেবে আমাদের সকলেরই সমাজ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। সমাজবিজ্ঞান সেই অপরিহার্য জ্ঞান সরবরাহ করে, যা একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও উন্নত সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই, ব্যক্তি ও সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
একনজরে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব দেখে নিন–
সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিভিন্ন সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সম্পর্কে জানার পাশাপাশি সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অনুধাবন করতে পারি। সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন স্তরবিন্যাস ও বৈষম্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন এবং গোষ্ঠী ও সংগঠনের গতিশীলতা অনুধাবন করা যায় সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে। এটি সামাজিক নীতি প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং আমাদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটায়। সমাজবিজ্ঞান পাঠের জ্ঞান ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সাফল্য এনে দিতে পারে এবং বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে। সামাজিক গবেষণা পদ্ধতির জ্ঞান লাভ এবং আত্মসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যের প্রতি সহানুভূতিও তৈরি হয়। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালনে এবং প্রযুক্তি ও সমাজের সম্পর্ক অনুধাবন করতে সমাজবিজ্ঞান পাঠ অপরিহার্য। জনস্বাস্থ্য ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং পরিবেশ ও সমাজের উপর মানুষের কার্যকলাপের প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। এছাড়াও, জেন্ডার ও সমাজের বিভিন্ন দিক, নগরায়ন ও সমাজের প্রভাব এবং বয়স্ক জনসংখ্যার বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানতে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তন সূচিত হয়। এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটেই সমাজবিজ্ঞানের জন্ম হয়। অগাস্ট কোঁৎকে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়, যিনি ১৮৩৮ সালে প্রথম ‘সোসিওলজি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে এমিল Durkheim, কার্ল মার্ক্স ও ম্যাক্স ওয়েবারের মতো সমাজবিজ্ঞানীরা এই শাস্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেন। বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয় মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫০-এর দশকে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নিয়মিত জরিপ ও গবেষণা পরিচালনা করে থাকে, যা নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।