- readaim.com
- 0
উত্তর::ভূমিকা: কর প্রদানের সামর্থনীতি হলো কর আরোপের একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এই নীতি অনুসারে, যাদের কর প্রদানের সামর্থ্য বেশি, তাদের ওপর করের বোঝা বেশি হওয়া উচিত এবং যাদের সামর্থ্য কম, তাদের ওপর কম। এই নিবন্ধে, আমরা এই নীতির মূল বিষয়বস্তু, এর গুরুত্ব, সমালোচনা এবং এর সার্বিক তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করব।
কর প্রদানের সামর্থনীতি বা Ability to Pay Principle হলো এমন একটি ধারণা, যা অনুযায়ী নাগরিকদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী কর আরোপ করা উচিত। এটি একটি ন্যায়সঙ্গত কর ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এই নীতি অনুসারে, একজন ব্যক্তির আয়, সম্পত্তি, বা ভোগের ওপর ভিত্তি করে তার কর প্রদানের সামর্থ্য নির্ধারণ করা হয়। যিনি বেশি উপার্জন করেন বা যার বেশি সম্পদ আছে, তিনি সমাজে বেশি অবদান রাখতে পারেন। তাই, তার ওপর বেশি হারে কর আরোপ করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: কর প্রদানের সামর্থনীতি হলো সেই নীতি, যা কর ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজায় যাতে প্রতিটি ব্যক্তির আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী করের ভার নির্ধারিত হয়।
কর প্রদানের সামর্থনীতি আধুনিক কর ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ। নিচে এর কয়েকটি মূল দিক আলোচনা করা হলো –
১। সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে: এই নীতি সমাজ থেকে বৈষম্য হ্রাস করতে সাহায্য করে। ধনীরা বেশি কর প্রদান করে এবং দরিদ্ররা কম কর দেয়, যা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। এই পদ্ধতি সমাজে সকলের মধ্যে এক ধরনের সমতা তৈরি করে, যা সামাজিক সংহতি ও শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক।
২। রাজস্ব বৃদ্ধি করে: সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এটি একটি কার্যকর নীতি। উচ্চ আয় ও সম্পদযুক্ত ব্যক্তিদের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপের মাধ্যমে সরকার প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারে, যা জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে ব্যয় করা হয়। এই অতিরিক্ত রাজস্ব দেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়।
৩। স্থিতিশীল অর্থনীতি: এই নীতি অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে। ধনীদের কাছ থেকে কর সংগ্রহ করে দরিদ্রদের মধ্যে তা ব্যয় করার ফলে সামগ্রিক চাহিদা বাড়ে। এর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায় এবং দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
৪। জনগণের সম্মতি: এই নীতিটি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। যেহেতু এটি ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, তাই বেশিরভাগ মানুষ এই কর ব্যবস্থা মেনে নেয়। এতে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কমে এবং কর সংগ্রহের প্রক্রিয়া সহজ হয়।
৫। জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে সহায়তা: সংগৃহীত কর দরিদ্রদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা হয়। এটি সমাজের দুর্বল অংশের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে সরকার জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কর প্রদানের সামর্থনীতির কিছু সমালোচনাও আছে। প্রথমত, এই নীতির প্রয়োগে মানুষের আয়ের প্রকৃত সামর্থ্য নির্ধারণ করা কঠিন। প্রায়শই ধনীরা কর ফাঁকি দেয় এবং তাদের আয় ও সম্পদ লুকিয়ে রাখে। দ্বিতীয়ত, উচ্চ হারে কর আরোপ করলে মানুষের আয় করার উৎসাহ কমে যেতে পারে। এটি বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তৃতীয়ত, এই নীতি অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করে। কর প্রশাসনকে প্রতিটি ব্যক্তির সামর্থ্য মূল্যায়ন করতে হয়, যা একটি জটিল এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এই কারণে এই নীতি সবসময় তার উদ্দেশ্য পূরণে সফল হয় না।
উপসংহার: কর প্রদানের সামর্থনীতি আধুনিক রাষ্ট্রের একটি মূল ভিত্তি। এটি একটি ন্যায্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা ও সমালোচনা রয়েছে, তবুও এর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই নীতি একটি সুষম ও কল্যাণকর রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য, যা সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য হ্রাস করে।

