- readaim.com
- 0

উত্তর::উপস্থাপনা:- সমাজবিজ্ঞান মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি ও আচরণ নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করে। এটি একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে ১৯শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন শিল্প বিপ্লব ও নগরায়নের প্রভাবে সমাজের গঠন বদলে যাচ্ছিল। অগাস্ট কোঁৎ, কার্ল মার্ক্স, এমিল ডুর্খাইম ও ম্যাক্স ওয়েবারের মতো চিন্তাবিদরা এটিকে একটি পদ্ধতিগত বিদ্যায় রূপ দেন। আজ সমাজবিজ্ঞান শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তব সমস্যা সমাধানেরও হাতিয়ার।
১।আলোকিত যুগের প্রভাব (Enlightenment Influence):- অষ্টাদশ শতাব্দীর আলোকিত যুগের যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাভাবনা সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই সময়ে মানুষ যুক্তি ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জগৎ ও সমাজকে বুঝতে আগ্রহী হয়। জন লক, মন্টেস্কু, রুশোর মতো দার্শনিকগণ সামাজিক চুক্তি, প্রাকৃতিক অধিকার এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে যে ধারণা দেন, তা সমাজচিন্তার ভিত্তি স্থাপন করে। তাঁদের চিন্তাভাবনা সমাজকে বিশ্লেষণের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যেখানে ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ব্যাখ্যার পরিবর্তে মানব যুক্তি ও অভিজ্ঞতার উপর জোর দেওয়া হয়।
২।ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব (Impact of the French Revolution):- ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব ইউরোপের সামাজিক ও রাজনৈতিক landscape-এ এক বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসে। পুরাতন সামন্ততান্ত্রিক সমাজের পতন এবং নতুন প্রজাতন্ত্রের উত্থান সমাজের মৌলিক কাঠামো, ক্ষমতা কাঠামো এবং সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে গভীর প্রশ্ন তৈরি করে। এই বিপ্লবী পরিবর্তনগুলি সমাজবিজ্ঞানীদের সমাজকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে উৎসাহিত করে। বিপ্লবের কারণ, প্রক্রিয়া ও ফলাফল সমাজবিজ্ঞানের প্রাথমিক অনুসন্ধানের বিষয়ে পরিণত হয়।
৩।শিল্প বিপ্লবের প্রভাব (Impact of the Industrial Revolution):- অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সংঘটিত শিল্প বিপ্লব ইউরোপীয় সমাজকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে শিল্পভিত্তিক সমাজের উত্তরণ, নতুন নতুন কলকারখানার সৃষ্টি, গ্রাম থেকে শহরের দিকে মানুষের ব্যাপক migration, নগরায়ণ, দারিদ্র্য, শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব এবং সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। এই দ্রুত পরিবর্তনগুলি সমাজবিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তাঁরা এই নতুন সামাজিক সমস্যা ও প্রবণতাগুলি বোঝার চেষ্টা করেন।
৪।অগাস্ট কোঁতের অবদান (Contribution of Auguste Comte):- ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁত (১৭৯৮-১৮৫৭) ১৮৩৯ সালে প্রথম “সমাজবিজ্ঞান” (Sociology) শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি সমাজকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণ করে সামাজিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও ব্যাখ্যা করবে। কোঁত “তিন স্তরের নিয়ম” (Law of Three Stages) – ধর্মতাত্ত্বিক স্তর, অধিবিদ্যামূলক স্তর এবং ইতিবাচক স্তর – এর মাধ্যমে মানব জ্ঞানের বিবর্তন ব্যাখ্যা করেন এবং ইতিবাচক স্তরে সমাজকে বৈজ্ঞানিকভাবে অধ্যয়নের উপর জোর দেন।
৫।হার্বার্ট স্পেন্সারের সমাজবিবর্তনবাদ (Herbert Spencer’s Social Darwinism):- ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেন্সার (১৮২০-১৯০৩) জীববিজ্ঞানের বিবর্তনবাদের ধারণা সমাজেও প্রয়োগ করেন। তিনি মনে করতেন সমাজ সরল অবস্থা থেকে জটিল অবস্থায় ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয় এবং এই বিবর্তনের ক্ষেত্রে “যোগ্যতমের টিকে থাকা” নীতি প্রযোজ্য। স্পেন্সারের এই ধারণা পরবর্তীতে সমালোচিত হলেও, সমাজকে একটি গতিশীল প্রক্রিয়া হিসেবে দেখার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।
৬।কার্ল মার্ক্সের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ (Karl Marx’s Dialectical Materialism):- জার্মান দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্ক্স (১৮১৮-১৮৮৩) সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো এবং শ্রেণিদ্বন্দ্বের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সমাজের বিবর্তন এবং পুঁজিবাদের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে। মার্ক্সের “Das Kapital” (১৮৬৭) গ্রন্থে তিনি দেখান কিভাবে বুর্জোয়া শ্রেণি শ্রমিক শ্রেণির শোষণ করে এবং কিভাবে এই শোষণ শ্রেণি সংগ্রামের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনকে অনিবার্য করে তোলে।
৭।এমিল ডুরখেইমের কাঠামোবাদ (Émile Durkheim’s Structuralism):- ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুরখেইম (১৮৫৮-১৯১৭) সমাজকে একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে বিবেচনা করেন, যা ব্যক্তির ঊর্ধ্বে বিদ্যমান এবং ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি “সামাজিক ঘটনা” (Social Facts) অধ্যয়নের উপর জোর দেন এবং দেখান কিভাবে সামাজিক সংহতি (Social Solidarity) সমাজের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। তাঁর বিখ্যাত কাজ “Suicide” (১৮৯৭) তে তিনি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখান কিভাবে সামাজিক কারণগুলি আত্মহত্যার হারের উপর প্রভাব ফেলে।
৮।ম্যাক্স ওয়েবারের ব্যাখ্যাত্মক সমাজবিজ্ঞান (Max Weber’s Interpretive Sociology):- জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার (১৮৬৪-১৯২০) সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক ক্রিয়ার (Social Action) ব্যাখ্যাত্মক বোঝার বিজ্ঞান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন। তিনি “আদর্শ প্রকার” (Ideal Types) ধারণা ব্যবহার করে সামাজিক ঘটনাগুলির বিশ্লেষণ করেন এবং ধর্ম ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক (যেমন, প্রোটেস্ট্যান্ট নীতিশাস্ত্র ও পুঁজিবাদের আত্মা) ব্যাখ্যা করেন। ওয়েবারের “The Protestant Ethic and the Spirit of Capitalism” (১৯০৫) একটি প্রভাবশালী কাজ।
সমাজবিজ্ঞানের সূচনালগ্ন থেকেই এর জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো কঠোর নিয়মানুগ পদ্ধতি অনুসরণ করা সম্ভব কিনা, নাকি সামাজিক ঘটনার ব্যাখ্যা ভিন্ন হওয়া উচিত – এই নিয়ে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মত পোষণ করেন। গুণগত ও পরিমাণগত গবেষণা পদ্ধতির বিতর্কও এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।
১০।নারীবাদের উত্থান (Rise of Feminism):- উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে নারীবাদের উত্থান সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করে। নারীবাদী তাত্ত্বিকগণ লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো এবং নারীর সামাজিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা সমাজবিজ্ঞানের মূলধারার তত্ত্বে নারীর অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিকোণকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।:-
১১।উপনিবেশবাদ ও জাতিগত অধ্যয়ন (Colonialism and Ethnic Studies):- উপনিবেশবাদ এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মিথস্ক্রিয়া সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিকশিত হয়। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব, জাতিগত সম্পর্ক, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সামাজিক অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সমাজবিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে ওঠে।:-
১২।শিকাগো স্কুলের অবদান (Contribution of the Chicago School):- বিশ শতকের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো স্কুল সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাঁরা নগরায়ণ, অপরাধ, দারিদ্র্য এবং অভিবাসনের মতো শহুরে সামাজিক সমস্যাগুলি নিয়ে মাঠভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা করেন। তাঁদের “মানবিক বাস্তুবিদ্যা” (Human Ecology) এবং গুণগত গবেষণা পদ্ধতি সমাজবিজ্ঞানের গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
১৩।কাঠামোগত functionalism (Structural Functionalism):- বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ট্যালকট পারসনস (১৯০২-১৯৭৯) এবং রবার্ট মের্টন (১৯১০-২০০৩)-এর মতো সমাজবিজ্ঞানীরা কাঠামোগত functionalism-এর বিকাশ ঘটান। এই তত্ত্ব সমাজকে একটি জটিল ব্যবস্থা হিসেবে দেখে, যার প্রতিটি অংশের নিজস্ব কাজ বা “ফাংশন” রয়েছে এবং এই অংশগুলির পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।:-
১৪।দ্বন্দ্ব তত্ত্বের পুনরুত্থান (Revival of Conflict Theory):- ষাটের দশকে C।Wright Mills (১৯১৬-১৯৬২) এবং Ralf Dahrendorf (১৯২৯-২০০৯)-এর মতো সমাজবিজ্ঞানীরা মার্ক্সের দ্বন্দ্ব তত্ত্বকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন। তাঁরা সমাজের ক্ষমতা কাঠামো, অসমতা এবং সামাজিক পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
১৫।মিথস্ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিকোণ (Interactionist Perspective):- প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদ (Symbolic Interactionism) জর্জ হার্বার্ট মীড (১৮৬৩-১৯৩১) এবং হার্বার্ট ব্লুমারের (১৯০০-১৯৮৭) নেতৃত্বে বিকশিত হয়। এই দৃষ্টিকোণ মানুষের দৈনন্দিন মিথস্ক্রিয়া, প্রতীক এবং অর্থের উপর মনোযোগ দেয় এবং কিভাবে এই মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সামাজিক বাস্তবতা নির্মিত হয় তা ব্যাখ্যা করে।
১৬।উত্তর-কাঠামোবাদ ও উত্তর-আধুনিকতাবাদ (Post-Structuralism and Postmodernism):- বিশ শতকের শেষদিকে মিশেল ফুকো (১৯২৬-১৯৮৪) এবং জ্যাঁ দেরিদার (১৯৩০-২০০৪)-এর মতো তাত্ত্বিকগণ উত্তর-কাঠামোবাদ ও উত্তর-আধুনিকতাবাদের ধারণা দেন। তাঁরা জ্ঞান, ক্ষমতা এবং ভাষার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সমাজের সর্বজনীন ব্যাখ্যাগুলির সমালোচনা করেন।
১৭।বিশ্বায়ন ও সমাজবিজ্ঞান (Globalization and Sociology):- একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সমাজবিজ্ঞানীরা এখন বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। জাতি, রাষ্ট্র এবং বিশ্ব সমাজের আন্তঃসংযোগ তাদের অনুসন্ধানের কেন্দ্রে।
তথ্য প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সমাজবিজ্ঞানীরা ডিজিটাল বিভাজন, সামাজিক মাধ্যম, অনলাইন মিথস্ক্রিয়া এবং প্রযুক্তিনির্ভর নতুন সামাজিক কাঠামো নিয়ে গবেষণা করছেন।
১৯।পরিবেশগত সমাজবিজ্ঞান (Environmental Sociology):- পরিবেশগত অবক্ষয় এবং জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। পরিবেশগত সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক, পরিবেশগত সমস্যার সামাজিক কারণ ও পরিণতি এবং টেকসই উন্নয়নের সামাজিক দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করছেন।
২০।চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান (Medical Sociology):- স্বাস্থ্য, রোগ এবং স্বাস্থ্যসেবার সামাজিক দিকগুলি চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়। সামাজিক অসমতা কিভাবে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের বণ্টন এবং রোগীর সামাজিক অভিজ্ঞতা এই শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
২১।জনসংখ্যা অধ্যয়ন (Demography):- জনসংখ্যা অধ্যয়ন সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যেখানে জন্মহার, মৃত্যুহার, অভিবাসন এবং জনসংখ্যার গঠন ও পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত কারণ কিভাবে জনসংখ্যার গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে তা এই শাস্ত্রের মূল অনুসন্ধানের বিষয়।
উপসংহার:- পরিশেষে বলা যায়, একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। দীর্ঘদিনের সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিবর্তনের ফলস্বরূপ উনিশ শতকে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। কোঁত, মার্ক্স, ডুরখেইম, ওয়েবারের মতো অগ্রণী চিন্তাবিদদের হাত ধরে সমাজবিজ্ঞান সমাজের জটিলতা অনুধাবন করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে এর পরিধি ও পদ্ধতি যেমন বিস্তৃত হয়েছে, তেমনি সমাজের পরিবর্তনশীল প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন ক্ষেত্রও উন্মোচিত হয়েছে। সমাজবিজ্ঞান আজও মানব সমাজের অন্তর্নিহিত রহস্য উন্মোচনে এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে এক অপরিহার্য জ্ঞান শাখা হিসেবে বিদ্যমান।
একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশ এক নজরে দেখে নিন-
আলোকিত যুগের প্রভাব, ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব, শিল্প বিপ্লবের প্রভাব, অগাস্ট কোঁতের অবদান, হার্বার্ট স্পেন্সারের সমাজবিবর্তনবাদ, কার্ল মার্ক্সের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, এমিল ডুরখেইমের কাঠামোবাদ, ম্যাক্স ওয়েবারের ব্যাখ্যাত্মক সমাজবিজ্ঞান, জ্ঞানতাত্ত্বিক বিতর্ক, নারীবাদের উত্থান, উপনিবেশবাদ ও জাতিগত অধ্যয়ন, শিকাগো স্কুলের অবদান, কাঠামোগত functionalism, দ্বন্দ্ব তত্ত্বের পুনরুত্থান, মিথস্ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিকোণ, উত্তর-কাঠামোবাদ ও উত্তর-আধুনিকতাবাদ, বিশ্বায়ন ও সমাজবিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সমাজ, পরিবেশগত সমাজবিজ্ঞান, চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান এবং জনসংখ্যা অধ্যয়ন – এই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর প্রেক্ষাপটেই একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে।
সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে ১৮৯৫ সালে ডুর্খাইমের “দ্য রুলস অব সোসিওলজিক্যাল মেথড” বইটি মাইলফলক। ১৯২২ সালে ওয়েবারের “ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি” প্রকাশিত হয়। ১৯৬০-এর দশকে আমেরিকায় নাগরিক অধিকার আন্দোলন সমাজবিজ্ঞানকে প্রভাবিত করে। ২০২১ সালের গ্যালাপ জরিপে দেখা যায়, ৭০% মানুষ সামাজিক অসমতা নিয়ে চিন্তিত। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সমাজ কাঠামো বদলে দেয়। সমাজবিজ্ঞান এখন কোভিড-১৯-এর প্রভাব, ডিজিটাল বিভেদ ও জলবায়ু উদ্বাস্তু নিয়ে গবেষণা করছে।