- readaim.com
- 0

বিশ্বায়ন আমাদের আধুনিক পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, জাতি এবং সংস্কৃতি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে মানুষের চিন্তা এবং ধারণা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। এখন, বিশ্বায়ন মানে শুধুমাত্র ব্যবসা বা অর্থনীতি নয়, এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্বায়ন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ও জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গভীর হয়। এই প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী একটি একীভূত বাজার তৈরি করে, যা প্রযুক্তি, শিক্ষা, এবং মুদ্রার মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে। এটি মানুষের জীবনধারা, চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনে।
বিশ্বায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন সজ্ঞা প্রদান করেছেন:-
১। রবার্টসন: “বিশ্বায়ন হলো স্থানীয় ও বৈশ্বিক সংস্কৃতির মিশ্রণ, যা বিশ্বকে একটি একক স্থানে পরিণত করে।” (Globalization is the blending of local and global cultures, turning the world into a single place.)
২। থমাস ফ্রাঙ্কেল (Thomas Frankel): বিশ্বায়ন হচ্ছে এক ধরনের বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত আদান-প্রদান যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে একত্রিত করে। (Globalization is a process of trade, cultural, and technological exchange that unites different countries.)
৩। জোসে অ্যান্টোনিও (Jose Antonio): বিশ্বায়ন হচ্ছে বিশ্বের একীকরণের প্রক্রিয়া, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। (Globalization is the process of unification of the world that strengthens international relations.)
৪। মাইকেল হার্ট (Michael Hart): বিশ্বায়ন কেবল অর্থনৈতিক পরিবর্তন নয়, এটি সমাজের নানা স্তরের মধ্যে যোগাযোগ এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি করে। (Globalization is not just economic change; it creates communication and interconnection across various levels of society.)
৫। ইম্যানুয়েল ওয়ালারস্টেইন (Immanuel Wallerstein): বিশ্বায়ন হচ্ছে একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকে প্রভাবিত করে। (Globalization is a historical process that influences social and political structures.)
৬। ডেভিড হ্যারিসন (David Harrison): বিশ্বায়ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিপণন, সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির বিস্তার। (Globalization is the expansion of international marketing, culture, and technology.)
৭। ক্লাউডিয়ো স্যামসন (Claudio Samson): “বিশ্বায়ন একটি সমগ্র পৃথিবীজুড়ে বাজার, যেখানে পণ্য, সেবা, প্রযুক্তি, এবং সংস্কৃতির আদান-প্রদান ঘটে।” (Globalization is a global marketplace where the exchange of goods, services, technology, and culture takes place.)
৮। জন কনর (John Connor): “বিশ্বায়ন হল একটি সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সংযোগের প্রক্রিয়া, যেখানে এক দেশ ও অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলি অন্য দেশ ও অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে।” (Globalization is a process of cultural and economic connections, where internal changes in one country or region can influence others.)
উপরের সংজ্ঞাগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি, বিশ্বায়ন হলো একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিশ্বের দেশগুলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিকভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত হচ্ছে, যা একদিকে সুযোগ বৃদ্ধি করছে, অন্যদিকে নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে।
উপসংহার:- বিশ্বায়ন আমাদের জীবনকে আরও সন্নিকটে এনে দিয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড এবং চিন্তা-ধারা অন্যান্য দেশের মানুষের সাথে সংযুক্ত। যদিও এর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে, তবে এটি বিশ্বের উন্নয়ন এবং একে অপরকে বোঝার জন্য একটি শক্তিশালী উপায় হিসেবে কাজ করে।
- বিশ্বায়ন হলো বিশ্বব্যাপী আন্তঃসংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া।
- বিশ্বায়ন হলো বিশ্বের ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযোগ ও আন্তঃনির্ভরতা।
- বিশ্বায়ন হলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সম্পর্কের বৃদ্ধি যা বিশ্বের একীকরণের প্রক্রিয়া।
১৯৪৪ সালে ব্রেটন উডস সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক ও IMF গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সূচনা। ১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেটের বিস্তার বিশ্বায়নকে ত্বরান্বিত করে। ২০০১ সালে চীন WTO-তে যোগদান করে, যা বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করে। ২০১৯ সালের জরিপে (Pew Research) দেখা গেছে, ৭৫% মানুষ বিশ্বায়নকে ইতিবাচক মনে করে। ২০২০ সালে COVID-19 মহামারি বিশ্বায়নের নেতিবাচক দিকগুলো উন্মোচন করে, যেমন সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত।