আরবি ভাষা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা।اللغة العربية
- readaim.com
- 0
গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য:-
(ইসলামের আবির্ভাবের ঠিক আগের যুগে আরব উপদ্বীপে আরবি ভাষার উৎপত্তি ঘটে। প্রাক-ইসলামী আরব কবিরা যে আরবি ভাষা ব্যবহার করতেন, তা ছিল অতি উৎকৃষ্ট মানের। তাদের লেখা কবিতা মূলত মুখে মুখেই প্রচারিত ও সংরক্ষিত হত। আরবি ভাষাতে সহজেই বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রয়োজনে নতুন নতুন শব্দ ও পরিভাষা তৈরি করা যেত এবং আজও তা করা যায়। ইসলামের প্রচারকেরা ৭ম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপের সীমানা ছাড়িয়ে এক বিশাল আরব সাম্রাজ্য গড়তে বেরিয়ে পড়েন এবং প্রথমে দামেস্ক ও পরে বাগদাদে তাদের রাজধানী স্থাপন করেন। এসময় ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এক বিশাল এলাকা জুড়ে আরবি প্রধান প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হত।)
আরবি ভাষার সজ্ঞা:-
পৃথিবীতে সকল মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য মুখদিয়ে আওয়াজ সৃষ্টি করে।আর এই ধ্বনি, আওয়াজ বা শব্দকে ইংরেজিতে Sound আর আরবীতে صَوْتٌ বলা হয়। ব্যাক্তি তার ফুস্ ফুস্, কন্ঠ, জিহ্বা, ওষ্ঠ, তালু, দাঁত ও নাক ইত্যাদি অর্গানের সাহায্যে অনেক ধরণের صَوْتٌ বা Sound অথবা শব্দ সৃষ্টি করে। মানুষের এই সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে বাকযন্ত্র বলা হয়।
শাব্দিক অর্থ:-
اللغة(লুগাত) আরবী শব্দ যার বাংলা প্রতি শব্দ হচ্ছে- ভাষা এর ইংরেজি প্রতি শব্দ হলো Language(ল্যাংগুয়েজ)।মানুষ যেসকল অর্থপূর্ণ ধ্বনী বা শব্দ বলে বা লিখে মনের ভাব প্রকাশ করে তাহাকে (লুগাত)اللغة বা ভাষা বলা হয়।
মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। পশুপাখি কথা বলার প্রয়োজন হয় না আর মানুষের কথা বলার প্রয়োজন হয়।তাই মানুষের মুখ সিশৃত অর্থপূর্ণ ধ্বনী সমষ্টিকে ভাষা বা اللغة (লুগাত) বলা হয়।
আর মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ সমাজে জন্মগ্রহণ করে।আর সমাজে তাকে বেড়ে উঠতে হয়। আর মানুষ প্রথমে ভাষাহীন থাকে।জন্মের পর মানুষ ভাষা শিক্ষার আগে পরযন্ত যে সকল শব্দ বা আওয়াজ করে তাকে ভাষা বলে না।কারণ আমরা তার ভাষা বুঝতে পারি না।
আরবী (লুগাত,অর্থ,ভাষা)কে প্রথমত বা প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- ১।সাধু আরবী রিতী।
- ২।চলিত আরবী রিতী।
- ৩।আঞ্চলিক আরবী রিতী।
১।সাধু আরবী রিতী:-সাধু আরবী রিতী বলতে আমরা সাধারণত বুঝি, যে ভাষায় কুরআন ও হাদিস লিখা হয়েছে।মহা নবী হযরত মুহাম্মদ সা: এর ভাষা ছিল আরবী।সাহাবী ও তাদের সঙ্গী সাথিদের ভাষাও সাধু ভাষার আরবী রিতী।
২।চলিত আরবী রিতী:-ক্লাসিক আরবীকে মূলত চলিত আরবী রিতী বলা হয়।যা মূলত শিশুদের শিখানো হয়। এছাড়াও অফিস, আদালত, বই, সংবাদ পত্র ও গল্প-উপন্যাসের বইয়ে এই ভাষার ব্যাবহার করা হয়।
৩।আঞ্চলিক আরবী রিতী:-প্রত্যেক ভাষার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক কিছু রিতী রয়েছে; তেমনিভাবে আরবী ভাষাতেও কিছু আঞ্চলিক কিছু রিতী রয়েছে।অর্থাৎ, বিভিন্ন স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে ভাষার কিছু তারতম্য রয়েছে।উচ্চারনের কিছু তারতম্য ও ভাসার কিছু অমিল রয়েছে যাতে আঞ্চলিক রিতীরূপ ফুটে উটে।যেমন- মক্কা, মদীনা, ইরাক, আলজেরিয়া, ইয়েমেন ও মরক্কোতে ভাষার উচ্চারণের কিছু পার্থক্য রয়েছে।
উইকিপিডিয়াতে আরবী اللغة/ভাষার প্রকার:-
উইকিপিডিয়াতে আরবী اللغة (লুগাত) বা ভাষাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
- ১।ধ্রুপদী আরবি
- ২।আধুনিক লেখ্য আরবি
- ৩।আধুনিক কথ্য বা চলতি আরবি।
১।ধ্রুপদী আরবি:-ধ্রুপদী আরবি ৬ষ্ঠ শতক থেকে প্রচলিত ও এতেই কুরআন শরীফ লেখা হয়েছে। আল-মুতানাব্বি ও ইবন খালদুন ধ্রুপদী আরবির বিখ্যাত কবি।
২।আধুনিক লেখ্য আরবি:-আধুনিক লেখ্য আরবিতে আধুনিক শব্দ যোগ হয়েছে ও অতি প্রাচীন শব্দগুলি বর্জন করা হয়েছে, কিন্তু এ সত্বেও ধ্রুপদী আরবির সাথে এর পার্থক্য খুব একটা বেশি নয়। আরবি সংবাদপত্র ও আধুনিক সাহিত্য আধুনিক লেখ্য আরবিতেই প্রকাশিত হয়। তাহা হুসাইন ও তাওফিক আল হাকিম আধুনিক লেখ্য আরবির দুই অন্যতম প্রধান লেখক ছিলেন।
৩।আধুনিক কথ্য বা চলিত আরবি:-বর্তমান যুগে বিভিন্ন দেশে আরবী ভাষার যে চলিত রূপ প্রচলিত আছে, তাকে মূলত চলিত আরবী বা আধুনিক কথ্য আরবী ভাষা বলা হয়।