- readaim.com
- 0
উত্তর::ভূমিকা: উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য একটি সুচিন্তিত বাজেট অপরিহার্য। এটি কেবল সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং সামাজিক সমতা নিশ্চিত করার একটি কার্যকর হাতিয়ার। তাই দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এমন একটি বাজেট নীতি প্রণয়ন করা উচিত, যা (SDG) টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সক্ষম।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঘাটতি বাজেট অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ, এই বাজেটের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
১.অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ: ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে (যেমন: রাস্তা, সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ) বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে, মানুষের আয় বৃদ্ধি করে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার করে। এর ফলে, দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
২.কর্মসংস্থান সৃষ্টি: সরকার যখন ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করে, তখন তারা বিভিন্ন নির্মাণ কাজ ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে অর্থ বরাদ্দ করে। এই ধরনের প্রকল্পগুলো প্রচুর পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। বেকারত্ব কমানোর জন্য এটি একটি কার্যকর কৌশল। নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, যা বাজারকে আরও সক্রিয় করে তোলে।
৩.সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি: ঘাটতি বাজেট ব্যবহার করে সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করতে পারে। যেমন, নতুন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল নির্মাণ অথবা দরিদ্রদের জন্য ভাতা প্রদান। এই ধরনের ব্যয়গুলো সমাজের দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরাসরি সহায়তা করে।
৪.দুর্যোগ মোকাবিলা ও জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা: কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন: বন্যা, খরা) বা মহামারি (যেমন: কোভিড-১৯) দেখা দিলে সরকার জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। এই অর্থ দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে পুনরায় স্থিতিশীল করতে জরুরিভাবে ব্যবহার করা যায়।
৫.ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিনিয়োগ: ঘাটতি বাজেট কেবল বর্তমানের সমস্যা মোকাবিলাই করে না, বরং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুদূরপ্রসারী বিনিয়োগের সুযোগও তৈরি করে। নতুন প্রযুক্তি, গবেষণা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও মজবুত করা সম্ভব হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের একটি কার্যকর পন্থা।
১.সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি: ঘাটতি বাজেটের মূল ধারণা হলো, সরকার তার আয়ের (রাজস্ব) চেয়ে বেশি ব্যয় করে। সরকার সাধারণত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প যেমন রাস্তাঘাট, সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র, স্কুল, ও হাসপাতাল নির্মাণে এই অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে। এটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনে।
২.ঋণ গ্রহণ ও অর্থায়ন: সরকারের অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাধারণত অভ্যন্তরীণ (ব্যাংক, ব্যক্তি) বা বৈদেশিক উৎস (বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) থেকে ঋণ নিয়ে সংগ্রহ করা হয়। এই ঋণের মাধ্যমে সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ তহবিল তৈরি করে।
৩.চাহিদা বৃদ্ধি: যখন সরকার অবকাঠামো প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে, তখন বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ে। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি পায় এবং ঠিকাদাররা লাভবান হয়। এর ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সামগ্রিকভাবে বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ে।
৪.বেসরকারি খাতে প্রণোদনা: ঘাটতি বাজেট বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। যখন সরকার বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়, তখন বেসরকারি কোম্পানিগুলোও সেইসব প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা ও শিল্পে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হয়। এর ফলে নতুন ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
৫.অর্থনৈতিক চক্রের সক্রিয়করণ: চাহিদা বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিনিয়োগের ফলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কর্মসংস্থান বাড়লে মানুষের আয় আরও বাড়ে, যা পুনরায় বাজারের চাহিদা বৃদ্ধি করে। এভাবে একটি ইতিবাচক অর্থনৈতিক চক্র তৈরি হয়, যা দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।
১.অর্থায়ন পদ্ধতি: ঘাটতি বাজেটের মূল বিষয় হলো আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে সংগ্রহ করে। এই ঋণ দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস যেমন বাণিজ্যিক ব্যাংক বা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বন্ড বিক্রি করে অথবা বৈদেশিক উৎস যেমন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অন্যান্য দেশ থেকে নেওয়া হয়।
২.অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান: ঘাটতি বাজেট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরকার এই বাজেট ব্যবহার করে বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে (যেমন: রাস্তা, সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র) বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগের ফলে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয় এবং মানুষের আয় বাড়ে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করে।
৩.মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি: ঘাটতি বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর ফলে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যখন সরকার অতিরিক্ত অর্থ বাজারে ছাড়ে, তখন অর্থের সরবরাহ বেড়ে যায় এবং পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যদি উৎপাদন সেই অনুপাতে না বাড়ে, তাহলে দাম বেড়ে যায়, যা মুদ্রাস্ফীতি ঘটায়।
৪.সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়ন: এই বাজেট ব্যবহার করে সরকার সামাজিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করতে পারে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এর মাধ্যমে সমাজের দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব হয়, যা দেশের সামগ্রিক মানব উন্নয়ন সূচকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
উপসংহার: ঘাটতি বাজেট একটি উন্নয়নমুখী কৌশল যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে। যদিও এর সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি জড়িত, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারে।
“ঘাটতি বাজেট” – এর প্রয়োজনীয়তা:-
- ১।অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ।
- ২।কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
- ৩।সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি।
- ৪।দুর্যোগ মোকাবিলা ও জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা।
- ৫।ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিনিয়োগ।
“ঘাটতি বাজেট” কিভাবে কাজ করে?
- ১।সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি।
- ২।ঋণ গ্রহণ ও অর্থায়ন।
- ৩।চাহিদা বৃদ্ধি।
- ৪।বেসরকারি খাতে প্রণোদনা।
- ৫।অর্থনৈতিক চক্রের সক্রিয়করণ।
“ঘাটতি বাজেট” – এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:-
- ১।অর্থায়ন পদ্ধতি।
- ২।অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান।
- ৩।মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি।
- ৪।সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়ন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন বাজেট ঘোষণা করা হয়, যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের এক জরিপে দেখা যায়, উন্নয়ন বাজেটের সঠিক ব্যবহার দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

