- readaim.com
- 0
উত্তর::ভূমিকা: বাজার অর্থনীতিতে চাহিদা ও যোগান দুটি বিপরীতমুখী শক্তি যা পণ্যের ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারণ করে। যেখানে ক্রেতার চাহিদা এবং বিক্রেতার যোগান রেখা পরস্পরকে ছেদ করে, সেখানেই ভারসাম্য অর্জিত হয়। তবে, ভোক্তার আয় বা রুচি পরিবর্তনের মতো কারণে চাহিদা পরিবর্তিত হলে এই ভারসাম্যও স্থানান্তরিত হয়, যা বাজারের নতুন অবস্থা নির্দেশ করে।
অর্থনীতিতে, চাহিদা ও যোগান রেখার পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি পণ্যের ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারিত হয়। ভারসাম্য এমন একটি অবস্থা যেখানে বাজারে একটি নির্দিষ্ট দামে পণ্যের চাহিদার পরিমাণ এবং যোগানের পরিমাণ সমান হয়। চাহিদা রেখা সাধারণত নিম্নগামী হয়, যা নির্দেশ করে যে দাম কমলে ক্রেতারা বেশি পরিমাণে পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী হয়। অন্যদিকে, যোগান রেখা ঊর্ধ্বগামী হয়, যা দেখায় যে দাম বাড়লে বিক্রেতারা বেশি পরিমাণে পণ্য সরবরাহ করতে চায়।
একটি চিত্রে যখন এই দুটি রেখা অঙ্কন করা হয়, তখন তারা একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পরস্পরকে ছেদ করে। এই ছেদবিন্দুটিই হলো ভারসাম্য বিন্দু। এই বিন্দুতে যে দাম (Price) পাওয়া যায়, তাকে ভারসাম্য দাম এবং যে পরিমাণ (Quantity) পাওয়া যায়, তাকে ভারসাম্য পরিমাণ বলা হয়। এই ভারসাম্য বিন্দুতে, ক্রেতারা যে পরিমাণ পণ্য কিনতে ইচ্ছুক, বিক্রেতারা ঠিক সেই পরিমাণ পণ্য বিক্রি করতে রাজি থাকে। এর ফলে বাজারে কোনো উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি থাকে না এবং স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়।

চিত্রে, D-D’ রেখাটি চাহিদা রেখা এবং S-S’ রেখাটি যোগান রেখা।
- চাহিদা রেখা (D-D’): এটি নির্দেশ করে যে একটি পণ্যের দাম বাড়লে তার চাহিদার পরিমাণ কমে যায়, এবং দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ বেড়ে যায়। এটি একটি নিম্নগামী রেখা (downward sloping curve)।
- যোগান রেখা (S-S’): এটি দেখায় যে একটি পণ্যের দাম বাড়লে বিক্রেতারা বেশি পরিমাণে সরবরাহ করতে আগ্রহী হয়, এবং দাম কমলে সরবরাহের পরিমাণ কমে যায়। এটি একটি ঊর্ধ্বগামী রেখা (upward sloping curve)।
ভারসাম্য বিন্দু হলো সেই নির্দিষ্ট বিন্দু যেখানে চাহিদা এবং যোগান রেখা দুটি পরস্পরকে ছেদ করে। চিত্রে এই ছেদ বিন্দুটি হলো E। এই বিন্দুতে:
- চাহিদার পরিমাণ = যোগানের পরিমাণ
চিত্রে, এই ভারসাম্য বিন্দু E-তে দাম P = 2 এবং পরিমাণ Q = 15। এই দামেই বাজারে পণ্যের চাহিদা এবং যোগান সমান হয়, ফলে কোনো উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি থাকে না।
ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারণ:-
ভারসাম্য দাম এবং পরিমাণ নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে:
১. অতিরিক্ত যোগান (Surplus): যদি দাম ভারসাম্য দামের (P=2) চেয়ে বেশি হয়, যেমন চিত্রে P=3, তখন যোগানের পরিমাণ (20) চাহিদার পরিমাণের (10) চেয়ে বেশি হয়। বাজারে উদ্বৃত্ত পণ্য থাকে। বিক্রেতারা তাদের অবিক্রীত পণ্য বিক্রি করার জন্য দাম কমাতে বাধ্য হয়, যা দামকে আবার ভারসাম্যের দিকে নিয়ে আসে।
২. অতিরিক্ত চাহিদা (Shortage): যদি দাম ভারসাম্য দামের (P=2) চেয়ে কম হয়, যেমন চিত্রে P=1, তখন চাহিদার পরিমাণ (20) যোগানের পরিমাণের (10) চেয়ে বেশি হয়। বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। ক্রেতারা বেশি দাম দিতে ইচ্ছুক হয়, যা দামকে আবার ভারসাম্যের দিকে ঠেলে দেয়।
সুতরাং, বাজার প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে দামকে সেই স্তরে নিয়ে আসে যেখানে চাহিদা এবং যোগান সমান হয়, যা ভারসাম্য বিন্দু (E) দ্বারা নির্দেশিত। এই ভারসাম্য দাম (P=2) এবং ভারসাম্য পরিমাণ (Q=15)-ই হলো সেই অবস্থা যেখানে বাজার স্থিতিশীল থাকে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, চাহিদা ও যোগান দুটি বিপরীতমুখী শক্তি হলেও তাদের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলেই বাজারে ভারসাম্য অর্জিত হয়। অতিরিক্ত যোগান (Surplus) বা অতিরিক্ত চাহিদার (Shortage) কারণে সৃষ্ট চাপ দামকে এমন একটি স্থিতিশীল বিন্দুতে নিয়ে আসে, যেখানে পণ্যের ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারিত হয় এবং বাজার স্থিতিশীলতা লাভ করে।

