- readaim.com
- 0
উত্তর::ভূমিকা: অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো দুষ্প্রাপ্যতা এবং নির্বাচন। এই দুটি ধারণা একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিটি স্তরে এদের প্রভাব দেখা যায়। দুষ্প্রাপ্যতা বলতে বোঝায় মানুষের অসীম চাহিদা এবং তার বিপরীতে সীমিত সম্পদের অস্তিত্ব। এই প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতার কারণেই মানুষকে সর্বদা এমন একটি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় যেখানে তার সব প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। এই দুষ্প্রাপ্যতাই জন্ম দেয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা। নির্বাচন হলো সীমিত সম্পদের মধ্যে থেকে বিকল্প উপায়গুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে কার্যকরী বা পছন্দের উপায়টি বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া।
দুষ্প্রাপ্যতা (Scarcity):-
দুষ্প্রাপ্যতা বলতে বোঝায় যে মানুষের চাহিদা সীমাহীন কিন্তু সেই চাহিদা পূরণের জন্য সম্পদ বা উপকরণ সীমিত। সহজ কথায়, পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা আমাদের সবার সব চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি দেশের সব মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং অন্যান্য পরিষেবা তৈরি করতে যে পরিমাণ জমি, শ্রমিক, কাঁচামাল এবং পুঁজি দরকার, তা সীমিত।
দুষ্প্রাপ্যতার কারণেই আমাদের বেছে নিতে হয় যে কোন জিনিসটি আগে উৎপাদন করা হবে, কোন পরিষেবা দেওয়া হবে এবং কিভাবে সম্পদ বণ্টন করা হবে। যদি সবকিছুই সবার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যেত, তাহলে অর্থনীতির প্রয়োজন হতো না। তাই দুষ্প্রাপ্যতাই হলো অর্থনীতির মূল সমস্যা।
নির্বাচন (Choice):-
যেহেতু সম্পদ দুষ্প্রাপ্য, তাই আমাদের নির্বাচন বা পছন্দ করতে হয়। নির্বাচন বলতে বোঝায় দুষ্প্রাপ্য সম্পদের মধ্যে থেকে কোন একটি বিকল্প বেছে নেওয়া। যখন আমাদের কাছে একাধিক বিকল্প থাকে এবং আমরা একটির বদলে অন্যটি গ্রহণ করি, তখন আমরা আসলে নির্বাচন করি।
অর্থনীতিতে নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিটি নির্বাচনের পেছনে একটি সুযোগ ব্যয় (Opportunity Cost) জড়িত থাকে। সুযোগ ব্যয় বলতে বোঝায় একটি জিনিস বেছে নেওয়ার জন্য যে বিকল্পটি ত্যাগ করা হলো, তার মূল্য। যেমন, আপনি যদি আপনার সীমিত টাকা দিয়ে একটি বই কেনেন, তাহলে আপনার সুযোগ ব্যয় হলো সেই টাকা দিয়ে যে অন্য জিনিসটি কিনতে পারতেন (যেমন একটি কফি বা একটি কলম), তার মূল্য।
দুষ্প্রাপ্যতা ও নির্বাচনের সম্পর্ক
দুষ্প্রাপ্যতা ও নির্বাচন একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। দুষ্প্রাপ্যতার কারণেই নির্বাচনের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমাদের চাহিদা অসীম কিন্তু সম্পদ সীমিত, তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে কোন চাহিদাটি পূরণ করা হবে এবং কোন সম্পদটি কোন কাজে ব্যবহার করা হবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াই হলো নির্বাচন।
উপসংহার: সুতরাং, বলা যায় যে দুষ্প্রাপ্যতা হলো অর্থনীতির মূল সমস্যা এবং নির্বাচন হলো সেই সমস্যার সমাধান। মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই এই দুটি ধারণার গুরুত্ব অপরিসীম। দুষ্প্রাপ্যতার কারণেই মানুষ এবং সমাজকে নিরন্তরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়—কী উৎপাদন করা হবে, কীভাবে উৎপাদন করা হবে এবং কার জন্য উৎপাদন করা হবে। প্রতিটি নির্বাচনের পেছনেই লুকিয়ে থাকে একটি সুযোগ ব্যয়, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কোনো একটি বিকল্প বেছে নেওয়ার অর্থ হলো অন্য বিকল্পটি ত্যাগ করা। এইভাবেই দুষ্প্রাপ্যতা এবং নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক হয়ে অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনাকে পরিচালিত করে।
দুষ্প্রাপ্যতা হলো মূল সমস্যা, আর নির্বাচন হলো সেই সমস্যার সমাধান করার উপায়।

